ক্যারিয়ার ভাবনা
এইচএসসি ফল প্রকাশ
ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনার উপযুক্ত সময় এখনইআমার এক পরিচিত ব্যাংকারের কথা বলি। একানব্বই সাল। তখন, আজকের এই জিপিএ সিস্টেম ছিল না। ভদ্রলোক মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে বিজ্ঞানবিভাগে মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হলেন। বাসার সবাই খুশি। মা ভেবে রাখলেন ছেলেকে ডাক্তারী পড়াবেন। আর বাবা চায় ইন্জিনিয়ার অথবা তার মতই বিসিএস অফিসার। গোল বাধলো ছেলেকে নিয়ে। ছেলে যে কি চায়, সে নিজেই নিশ্চিত নয়। তবে হ্যাঁ, ছেলের ক্যাডেট কলেজের কয়েক বন্ধু ঠিক করলো, তারা ‘মেরিন’এ পড়বে। আর এর মধ্যে যে পালের গোদা তার যুক্তিও ছিল অকাট্য - মোটা মাইনের চাকরি, বিনা পয়সায় দেশ-বিদেশ ঘুরতে পারা, বাজার করার ঝামেলা নেই, বাড়তি কোন খরচও নেই, দৈনন্দিন জীবনের ফাইফরমাইশ থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে। আর কি চাই! যেহেতু, মেরিন একাডেমীতে ক্যাডেট ভর্তি পরীক্ষা অন্যান্য সকল পরীক্ষার আগেই হয়ে যায়, ভদ্রলোক মেডিক্যাল, বুয়েট অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে এডমিশন টেস্ট দেয়ার কোন সুযোগই পেলেন না। যথারীতি লিখিত পরীক্ষায় পাশের পরে মৌখিক আর মেডিক্যাল টেস্টের জন্য ডাক পেলেন। মৌখিক পরীক্ষা ভালই হলো। মেডিক্যাল টেস্ট নিয়ে কিছুটা টেনশন- কেননা উনি তখনই চশমা ব্যবহার করতেন । আর মেরিন-এ চোখের পাওয়ার পারফেক্ট হওয়া চাই। তবে, উনি যেহেতু, ‘প্রকৌশল’ বিভাগের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন; কাজেই চশমার সামান্য পাওয়ার তার জন্য কোন বাধা হয়ে দাঁড়ালো না। ফাইনাল রেজাল্ট বের হলো। সিলেক্টেড । ছেলে খুব খুশি। মা পড়লেন বেজায় দোটানায় - এমন ‘প্রফেশন’ যার নাম শুনেছেন কিন্তু প্রফেশনাল কারোর সাথে মা’র কোন পরিচয় নেই। আর এদিকে, ক্যাডেট কলেজের যে বন্ধুর পরামর্শে অনুপ্রানিত হয়ে ভদ্রলোক তার ‘ক্যারিয়ার ডিসিশন’ নিয়েছেন, সে কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার দিন অনুপস্থিত ছিল - কেননা ঐ একই দিনে তার ছিল আর্মি এডমিশন টেস্ট - আইএসএসবি।
যাহোক, ভদ্রলোকের মা’র কথায় আসি। নিজের ছেলে বলে কথা! অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে উনি তাঁর কলেজের ( মা ছিলেন সরকারী কলেজের শিক্ষয়িত্রী ) এক সহকর্মীর বাসার ঠিকানা যোগাড় করলেন। তাঁর সেই সহকর্মীর বড় ছেলে জাহাজের চীফ ইন্জিনিয়ার - এই মুর্হূতে সমুদ্রে। তাতে কি? তর সইছে না। উনি সেই চীফ ইন্জিনিয়ারের মা’র সাথে কথা বললেন। ঐ মার কাছ থেকে আরেক ক্যাপ্টেনের বাসার ঠিকানা নিলেন। প্রফেশন’টা সম্পর্কে জানার জন্য। সবাই প্রায় একই পরামর্শ দিলেন - যদিও ‘মেরিন’ প্রফেশনটা একটু একঘেঁয়ে বা মোনোটনাস, কিন্তু অনেক দেশ দেখা যায়, মাইনেটাও ভাল । আর যেহেতু, ক্যাডেট কলেজের ছাত্র, সে খাপ খাওয়াতে পারবে। ভদ্রলোকের মা নিজেকে বোঝালেন এবং ছেলের ইচ্ছার কাছে নিজেকে সমর্পণ করলেন।
এরপরের ঘটনাও খুব সহজ। দুই বছর একাডেমীতে পড়ার পর; ভদ্রলোক যথারীতি জাহাজে যোগ দিলেন। একবছর চাকরী - বন্দরে বন্দরে। জাহাজের বদ্ধ জীবন, নাবিককে অধৈর্য্য করে তুললো। উনি একটা জিআরই (GRE) বই কিনেছিলেন। ঐ বই থেকেই ইংরেজী ভকেবুলারী পড়তেন, ইনজিন রুমে। একটা ছোট নোটবুক ভরে ফেলেছিলেন নতুন শব্দ টুকে। নভেম্বর মাসে ছুটিতে বাড়ী এলেন। ডিসেম্বর মাসে আইবিএ-তে এমবিএ ভর্তি পরীক্ষা। এমবিএ কমপ্লিট করে আজ উনি ব্যাংকার। এখনও উনি যত্ন করে রেখে দিয়েছেন তার সেই তেল-মবিল মাখা ছোট নোটবুকটা।
আমাদের দেশে এরকম উদাহরন ভুরি ভুরি - যারা জীবনের মাঝপথে এসে ক্যারিয়ারের গতিপথ পরিবর্তন করেছেন। এমবিবিএস বা ইন্জিনিয়ারিং পাশ করে বিসিএস পুলিশ বা এডমিনিস্ট্রেশন (মেজিস্ট্রেট) ক্যাডারে যোগ দিচ্ছেন। আবার সাধারন বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করার পরে, আইটি সেক্টরে ঢুকছেন। আমি বলছি না যে, এক্ষেত্রে তাঁর পড়াশুনা বৃথা যাচ্ছে। কেননা, জীবনের কোন পড়াশুনা বা অভিজ্ঞতাই বৃথা যাবার নয়। তবে, আমাদের প্রতিটি মানুষের জীবনই খুব স্বল্প সময়ের জন্য। আর তাই জীবনের লক্ষ্য স্থির করা এবং কম দরকারি ব্যাপারগুলি সময় থাকতেই ঝেড়ে ফেলা অতিব গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের দেশে পড়াশুনা শেষ করে নিজের পছন্দ আর যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ অতি সীমিত; কাজেই ব্যক্তিগত পছন্দের সাথে কতগুলি বিষয়কে বিবেচনায় আনাটা অতি জরুরী। আর যেহেতু এইচএসসি’র পরেই একজন পরিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিষয় নির্বাচন করে থাকে, কাজেই বিষয়গুলি নিয়ে চিন্তা করার সময় এখনই। আমাদের দেশে একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত কর্মপন্থার অনেকটাই নির্ভর করে তার বাবা-মা অথবা অপরাপর কোন অভিভাবকের সিদ্ধান্তের অথবা পছন্দের উপর। কাজেই, এইচএসসি’র পরের আজকের এই গ্রাউন্ডওয়ার্ক শিক্ষার্থী আর অভিভাবক যদি মিলিত প্রয়াসে করতে পারে, তবে তা হবে অধিকতর ফলদায়ক।
উচ্চতর পড়াশুনায় ভর্তি হবার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে যে বিষয়গুলি বিবেচনায় আনা দরকার তাহলো - # শিক্ষার্থীর মেধা, # বিষয় বা সাবজেক্টের প্রতি ব্যক্তিগত ঝোঁক, # বিষয় বা সাবজেক্টের প্রায়োগিক প্রয়োগ, # বিষয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ( Admission ) অনিশ্চয়তা # পড়াশুনা চালিয়ে যাবার আর্থিক সামর্থ্য, # বর্তমান এবং ভবিষ্যত কর্মেক্ষেত্র বিষয়ভিত্তিক চাকুরী প্রাপ্তির সম্ভাবনা । এগুলির সাথে আরো একটি ব্যাপারকে বিবেচনায় আনাটা জরুরী বলে আমি মনে করি। সেটা হলো বিদেশে চাকুরী করার অথবা সেটেল্ড করার মানসিকতা এবং তদানুযায়ী বিষয় নির্বাচন।
মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রাথমিক সমস্যা ‘বিষয়’ নির্বাচন - যেটা আমরা লেখার শুরুতে দেখলাম। যেহেতু তার ক্ষেত্রে বিষয় অনুযায়ী ভর্তি হওয়াটা তেমন কোন সমস্যা হয় না; অনেকগুলি বিষয়ে এবং অনেকগুলি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেয়ে তারা দোটনায় ভোগে। স্থির করতে পারে না কোন বিষয়টিকে তার প্রাধান্য দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে, শিক্ষার্থীর প্রয়োজন নিজের ‘ইচ্ছা’র সাথে ভবিষ্যত চাকুরীকে বিবেচনায় আনা। আজকের বিষয় নির্বাচন ভবিষ্যতে আমাকে যে ধরনের চাকুরীর সুযোগ করে দিতে পারে, তার সম্পর্কে কিছুটা জেনে রাখা ভাল। যারা ঐ ধরনের চাকুরীতে নিয়োজিত তাদের সাথে আলোচনা করা যেতে পারে। রিলেটেড চাকুরীজীবির সাথে আলোচনা করলে, সহজেই সংশ্লিষ্ট চাকুরীরতে কাজের ধরন, প্রয়োজনীয় দক্ষতা, কাজের পরিধি সম্বন্ধে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। আমি ‘অংক’-এ ভাল এবং ভাল নম্বরও পেয়েছি; কিন্তু, গাদা গাদা যোগ, বিয়োগ করতে আমার অস্হির লাগে। তাহলেতো আমার ‘হিসাববিজ্ঞানে’ ( Accounting ) ভর্তি না হওয়াটাই শ্রেয়। কেননা, যেকোন প্রতিষ্ঠানের একাউন্টেন্ট হলে তো আমাকে সেই হিসাবই করতে হবে প্রাথমিক পর্যায়ে। আমি অংকে যেমন ভাল, আমার স্মৃতিশক্তি মন্দ নয় এবং আমি মানুষের সাথে মিশতেও পছন্দ করি - তাহলেতো আমি একজন দক্ষ ব্যাংকার হতে পারি! আবার, আমার রেজাল্ট খুব আহামরি কিছু না হলেও, আমার স্মরণশক্তি ভাল এবং আমি কিছুটা মিশুক প্রকৃতির। এরকম ক্ষেত্রে ‘কাস্টমার সার্ভিস’, ‘পাবলিক রিলেশন’-এর কাজ আমার জন্য উপযুক্ত হতে পারে। এভাবেই প্রায়োগিক পদ্ধতিতে নিজেকে স্থাপন করতে হবে ভবিষ্যতের কর্মেক্ষত্রে । এবং সে অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করাটা জরুরী।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ছাত্র-ছাত্রীরা যে বিষয়টিকে জানতে বা পড়তে পছন্দ করে সেটাকেই ক্যারিয়ারের জন্য বেছে নেয়। শিক্ষাজীবন শেষে তার ক্যারিয়ারের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে। কেননা, সেই বিষয়ের ব্যাবহারিক প্রয়োগ সীমিত। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশের চাকুরীর বাজার অত্যন্ত সীমিত। আর্থিক সার্মথ্য সীমিত হলে, বিষয় নির্বাচনের ব্যাপারে সর্তক হওয়া প্রয়োজন। আমার দেশ-বিদেশের ইতিহাস পড়তে ভাল লাগে। কিন্তু, আমাদের দেশে কি ‘ইতিহাস’ বিষয়ে গবেষণা করার যথেষ্ট সুযোগ আছে? উত্তর হলো ‘না’। কাজেই, যে শিক্ষার্থী অনার্স এবং মাস্টার্স ইতিহাস নিয়ে পড়াশুনা করলো, পাশ করে বের হবার পরে বিশ্ববিদ্যালয় বা কোন কলেজের অধ্যাপকের চাকুরী না পেলে তাকে অন্যকোন ‘জেনারেল’ লাইনে যেতে হবে। এক্ষেত্রে তার চার বা পাঁচ বছরের পড়াশুনাটা, চাকুরী ক্ষেত্রে তেমন কোন কাজেই আসবে না। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এরকম আরও কিছু উদাহরণ দেয়া যেতে পারে - বাংলা, ভাষাতত্ত ¡ , দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আর্কিওলজি, মনোবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস প্রভৃতি। আর্থিক সার্মথ্যকে সমন্বয় করে এইসব সাবজেক্ট সিলেক্ট করাটা শিক্ষার্থীর জন্য জরুরী। আমি অবশ্যই এই সাবজেক্ট পছন্দের ব্যাপারে কোন নেতিবাচক মূল্যায়ণ করছি না। কিন্তু, কেউ যদি গবেষণাকর্ম আর অধ্যাপণার বাইরে ব্যাবহারিক অথবা ফলিত বিষয়ে নিজের ক্যারিয়ার তৈরী করতে চায়, তাহলে তাকে সে অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করতে হবে।
আমাদের দেশের বেশীরভাগ শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের নিকট উচ্চমাধ্যমিকের পরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা সরকারী কলেজ এখনও প্রথম পছন্দ। কাজেই ভর্তিযুদ্ধে বেশীরভাগ শিক্ষার্থীর টার্গেট থাকে নিজের পছন্দের বিষয়ে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থান করে নেওয়া। কিন্তু আসন সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত হবার কারনে অনেক শিক্ষার্থীই তার পছন্দমত সাবজেক্টে ভর্তি হতে পারে না । ফলে, ইয়ার লস দিয়ে তারা সাবজেক্ট এবং প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনে সচেষ্ট হয়। কাজেই, ভর্তির ব্যাপারে এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে। মনে রাখা দরকার যে, সীমিত সুযোগের এই দেশে শিক্ষার্থীর মানসিক দৃঢ়তা, নিজের মেধাগত অবস্থান সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা আর ভবিষ্যতকে দেখতে পারার মতাই কেবল এই বহুমুখী টানপোড়েনের অবস্থা থেকে সুন্দরভাবে উত্তরণে সহায়ক হতে পারে।
যেসব শিক্ষার্থীর আর্থিক সার্মথ্য সীমিত এবং কর্মেক্ষত্রে দ্রত প্রবেশ করাটা জরুরী, তাদেরকে বিষয় নির্বাচন করতে হবে সতর্কতার সাথে। এক্ষেত্রে প্রথমেই আসে ‘আইএসএসবি’ এবং ‘মেরিন একাডেমী’। সংবাদপত্রে সার্কুলারের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানগুলি ভর্তিপরীক্ষা নিয়ে থাকে । ‘আইএসএসবি’র মাধ্যমে দেশের ৩টি সশস্ত্র বাহিনীতে অফিসার নিয়োগ করে। অপরদিকে মেরিনে আছে দুইটি বিভাগ - ‘ইন্জিনিয়ারিং’ আর ‘নটিক্যাল’। প্রথমটি তৈরী করে জাহাজের চিফ ইন্জিনিয়ার বা প্রধান প্রকৌশলী আর পরেরটি তৈরী করে ক্যাপ্টেন। তবে মনে রাখা দরকার এই চাকুরীগুলি আর দশটা সাধারণ প্রফেশনের মতো নয়।
বর্তমান যুগ বানিজ্যের যুগ। আর বানিজ্য যতদিন থাকবে, অর্থনীতি, মার্কেটিং, ফিন্যান্স, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, ব্যবসায় প্রশাসন, ব্যাংকিং প্রভৃতি বিষয়ের চাহিদা উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকবে। যারা বিভিন্ন বানিজ্যিক, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী অথবা কিছুদিন চাকুরী করে নিজেই কোন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন দেখে; তারা এই বিষয়গুলি বিবেচনায় আনতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে সেশনজ্যাম না থাকলে, এই বিষয়ে অনার্স বা মাস্টার্স করেও মোটামুটি দ্রুত একটি চাকুরী পাওয়া যেতে পারে।
আমাদের দেশে বিসিএস-এর চাকুরীর মর্যাদা এখনও মানুষের মনে অনেক উপরে। অনেক শিক্ষার্থীই ভবিষ্যতে নিজেকে বিসিএস অফিসার হিসাবে দেখতে পছন্দ করে। যাদের টার্গেট বিসিএস, পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাকুরী তারা বিসিএসভুক্ত সাধারণ কোন বিষয় উচ্চশিক্ষার জন্য বেছে নিতে পারে। এক্ষেত্রে, সাবজেক্টিভের তুলনায় অবজেক্টিভ বিষয় নির্বাচন বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে। কেননা, এইসব সাবজেক্টের পরীক্ষায় নন্বর বেশী তোলা যায়। এরমধ্যে অনেক বিষয়ই বিসিএস-এর বাইরেও শিক্ষকতা অথবা উন্নয়নমূলক অথবা গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানে কাজে আসতে পারে যেমন - ইংরেজী, বাংলা, সমাজবিজ্ঞান, সমাজকল্যাণ, গনিত, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, দর্শন, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, মনোবিজ্ঞান, ভূগোল, ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান। এক্ষেত্রে একটি ব্যাপার উল্লেখ করা দরকার যে, সভ্যতা আর বানিজ্যের প্রসারের সাথে সাথে ‘ইংরেজী’র প্রয়োজনীয়তা উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে । বাংলাদেশও এই প্রবণতার বাইরে নয়। দেশে ভাল ইংরেজী জানা একজন শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা যে কতটুকু তা পাবলিক পরীক্ষাগুলিতে ‘ইংরেজী’ বিষয়ে ফলাফল থেকেই সহজে উপলব্ধি করা যায়।
একটা সময় ছিল, যখন মা-বাবারা তাঁদের মেধাবী সন্তানকে ভবিষ্যতে ‘ডাক্তার’ অথবা ‘ইন্জিনিয়ার’ হিসাবে দেখতে পছন্দ করতেন। ব্যবসা-বানিজ্যের প্রসারে কি এইদুটি বিষয়ের মূল্যায়ণ কমে গিয়েছে? উত্তর হলো মোটেও না। তবে, ইন্জিনিয়ারিং-এর বেশ কিছু নতুন শাখার বিস্তার হয়েছে এবং একটির তুলনায় আরেকটি শাখার ( Department ) গুরুত্বের তারতম্য হয়েছে। ইন্জিনিয়ারিং অথবা বিজ্ঞান-এর নতুন যে বিষয়গুলি আজকাল বেশী চাকুরীর ক্ষেত্রে তৈরী হচ্ছে তাহলো - কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং, লেদার টেকনোলজি, টেলিকমিউনিকেশন, কমিউনিকেশন টেকনোলজি, সিরামিক টেকনোলজি, আরবান (নগর উন্নয়ন) ম্যানেজমেন্ট, জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং, বায়োটেকনোলজি, কৃষিবিজ্ঞান প্রভৃতি। এছাড়া ইন্জিনিয়ারিং-এর সনাতন কিছু বিষয়ের চাহিদা এখনও অটুট রয়েছে। তার মধ্যে ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স, সিভিল, মেকানিক্যাল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। যে যে সেক্টরে এইসব বিষয়ের চাহিদা প্রচুর তা একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। প্রধান সেক্টরগুলি হলো - গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল, টেলিফোন অপারেটর, টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি, সিরামিক ইন্ডাষ্ট্রী, ওষুধ শিল্প, পাওয়ার (বিদ্যুত) সেক্টর, রিয়াল এস্টেট প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ( Infrastructure like Bridge, Culvert, Roads & Highways ) । আর আমাদের দেশের সাধারন মানূষের জন্য চিকিত্সক আর চিকিত্সা সেবা এতটাই অপ্রতুল যে, একজন চিকিত্সক এমবিবিএস পাশ করার পরেই যেকোন ফার্মেসীতে বসে চিকিত্সা সেবা প্রদান করতে পারে। এখানে আরও একটি ব্যাপার উল্লেখযোগ্য যে, বাইরের দেশেও ইন্জিনিয়ার বা ডাক্তারের চাহিদা প্রচুর। যারা ভবিষ্যতে অষ্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা বা কানাডাতে চাকুরী করতে চায়, তাদের জন্য এই প্রফেশন দুটি যথেষ্টই সহায়ক হবে।
আরও কিছু সাবজেক্ট, যা বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট চাহিদার সৃষ্টি করছে এবং সামনের দিনগুলিতেও করবে তার দিকে লক্ষ্য করা যেতে পারে। হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং, ফ্যাশন ডিজাইনিং, গনমাধ্যম ও সাংবাদিকতা ( Mass media & Journalism ), ফিল্ড এন্ড আ্যনিমেশন, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং প্রভৃতি অন্যতম। অনেকেই আজকাল এগুলির মধ্যে নিজের ঝোঁক অনুযায়ী কোন একটি সাবজেক্ট নিযে পড়াশুনা শেষ করে নিজেই কোন ফার্ম দিয়ে বসছেন। এছাড়া আইন বিষয়ে পড়াশুনা শেষেও চাকুরীর পাশাপাশি পেশাগত চর্চা চালিয়ে যাওয়া যায়।
আজকাল বাহারী নামে নতুন নতুন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ স্থাপিত হচ্ছে। এদের কয়েকটির মান নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থাকলেও, দু’একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগ্য ছেলেমেয়ে বের হচ্ছে। চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠানগুলিও এদের মধ্য থেকে ভবিষ্যত এক্সিকিউটিভ গড়ে নিচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও এসব প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান যুগোপযোগী সিলেবাস প্রণয়নে যথেষ্ট আন্তরিক । সময় থাকতেই এসব কোর্স কারিকুলাম নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা এবং নিজের পছন্দ, মেধা আর আর্থিক সার্মথ্য অনুযায়ী সাবজেক্ট চয়েস করার চেষ্টা করা শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরী।
পরিশেষে একটি কথাই বলতে চাই, আমাদের দেশ একটি জনবহুল দেশ। আপাত: দৃষ্টিতে মনে হতে পারে এত লোকের কর্মসংস্থান আমাদের মত গরীব দেশের জন্য শুধু দুষ্করই নয় অসম্ভবও বটে। এই মতামতের সাথে দ্বিধা প্রকাশ না করেও যে কথাটি জোর গলায় বলতে চাই তাহলো, বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি মোটা অংকের মাইনে দিয়েও যোগ্য কর্মী পাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানগুলি হয় বাইরে থেকে লোক আনছে অথবা, একে ওকে দিয়ে ঠেকা দিয়ে কোনরকমে কাজ চালিয়ে নিচ্ছে।
আজ, এইচএসসি পাশের পরে, একজন শিক্ষার্থী কিছুটা সময় যদি এই ব্যাপারগুলি নিয়ে চিন্তা করে এবং তদানুযায়ী একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে, ক্যারিয়ারের বাকিটা সে একজন পেশাদার খেলোয়াড়ের মতই খেলে যেতে পারবে। ‘ক্যারিয়ার’ হতে পারে পেশাদার খেলোয়াড়ের জীবনের মতই আনন্দদায়ক এক পেশা । আর এব্যাপারে অভিভাবকদের ভূমিকা হতে পারে অনস্বীকার্য ।
আহমদ ইসলাম মুকসিত
চেয়ারম্যান, বিডিজবস.কম
muqsit@bdjobs.com
Career Resource
Articles
- BdJobs Feature Articles
- Career Development Articles
- Interview Articles
- Cover Letter Articles
- Freelancing Articles
- Salary Articles
- Resume Articles
- Human Resource Management Articles
- Career in NGO Articles
- RMG Articles
- Career in Media